জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড হয়ে গেল। আগামীকাল থেকেই শুরু হচ্ছে দুই দিনের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)। বাংলাদেশ থেকে আমরা ছয় সদস্যের দল নির্বাচন করেছি। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে হবে এই অলিম্পিয়াড, কিন্তু অংশগ্রহণকারীরা যাঁর যাঁর দেশ থেকেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে ভার্চ্যুয়াল অলিম্পিয়াডে অংশ নেবেন। গত বছরও ভার্চ্যুয়াল অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ থেকে আমাদের টিম অংশগ্রহণ করে। ঢাকায় প্রথম আলো অফিসে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। আইএমও থেকে মনোনীত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ দল পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হয়।
ছবি: সংগৃহীত
কিন্তু এবার আরও কঠিন অবস্থা। সামনে ঈদ। এরপরই আবার কঠোর বিধিনিষেধ। তাই সব দিক বিবেচনা করে আমাদের নির্বাচিত দলের ছয় সদস্যের সবাইকে আমরা ঢাকায় নিয়ে আসছি না। আইএমও অনুমোদিত ভিক্টোরিয়ান প্রটোকল অনুযায়ী দুজন ঢাকা, দুজন ময়মনসিংহ ও একজন কুষ্টিয়া থেকে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা দেবেন। আমাদের নির্বাচিত টিমের আর একজন ছাত্রী এখন দিল্লিতে রয়েছেন, সেখান থেকেই তিনি ভারতীয় অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে একত্র হয়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নেবেন।
একদিকে যখন আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের কাজ চলছে, তখন একই সঙ্গে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড সাত দিনের একটি জুনিয়র গণিত অলিম্পিয়াড কর্মশালা পরিচালনা করে। ৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। তাদের সবাই স্কুলের শিক্ষার্থী। সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল ১৬ জুলাই। কর্মশালা ও সমাপনী অনুষ্ঠান ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যে কত চৌকস, তা সেদিনের অনুষ্ঠানে তাদের কথা থেকেই বুঝতে পেরেছি। তাদের সবাই বলেছে যে এই কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে গণিত কর্মশালায় অংশ নিতে পেরে তারা খুব খুশি। আরও কর্মশালায় অংশ নিতে চায়।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল তো তাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। যেখানে অনেকে গণিত এড়িয়ে চলতে চায়, সেখানে এই কিশোর শিক্ষার্থীরা মহানন্দে গণিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এর চেয়ে বড় উৎসাহের বিষয় আর কী হতে পারে! বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানও তাদের শুভেচ্ছা জানান। আমিও বলি দেশের তরুণেরা ক্রমেই বিজ্ঞান সচেতন হয়ে উঠছে। তারাই বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে।
অধ্যাপক কায়কোবাদ তরুণদের মেধার প্রশংসা করার পাশাপাশি তাদের একটা মৌখিক পরীক্ষাও নিয়ে ফেললেন। তিনি একটি মজার প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নটা এ রকম: এক ব্যক্তি লোকজনকে ডেকে বললেন, কেউ যদি কিছু টাকা নিয়ে তার সামনের পুকুরে একবার ডুব দেয়, তাহলে তার টাকা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এরপর সেখান থেকে তাকে ১৬ টাকা দিতে হবে। বাকি টাকা নিয়ে সে আবার ডুব দিয়ে দ্বিগুণ টাকা পাবে এবং সেখান থেকে তাকে ১৬ টাকা দিতে হবে। এরপর আবার ডুব দিয়ে আবার দ্বিগুণ টাকা পাবে ইত্যাদি। এ কথায় উৎসাহিত হয়ে একজন কিছু টাকা নিয়ে পুকুরে ডুব দিল এবং দ্বিগুণ টাকা থেকে ১৬ টাকা দিয়ে আবার ডুব দিল। এভাবে চারবার ডুব দেওয়ার পর সে দেখে তার কাছে মাত্র ১৬ টাকা রয়েছে, যা সেই ব্যক্তিকে দিয়ে দিতে হলো এবং শূন্য হাতে ফিরে এল। এখন প্রশ্ন, প্রথমে কত টাকা নিয়ে তিনি পুকুরে ডুব দেওয়া শুরু করেছিলেন?
অধ্যাপক কায়কোবাদ বারবার বলছিলেন, ‘তোমরা চিন্তা করে উত্তর বের করো, আমাকে পরে জানালেই হবে।’ কিন্তু কথা শেষ হওয়ার আগেই চ্যাটবক্সে উত্তর আসা শুরু হয়ে গেছে এবং তাদের প্রায় সবার উত্তর সঠিক! আমাদের স্কুলের কিশোরেরা যে কত মেধাবী, তা সহজেই বোঝা যায়। এখন পাঠকেরা বলুন তো উত্তরটা কী? কত টাকা নিয়ে প্রথমে ওই ব্যক্তি পুকুরে ডুব দেওয়া শুরু করেছিল?
মুহূর্তের মধ্যে উত্তর এসে যাওয়ায় খুশি হয়ে অধ্যাপক কায়কোবাদ বললেন, ‘আচ্ছা, তোমরা আরেকটি সমস্যার সমাধান দাও তো দেখি। প্রশ্নটা এ রকম: একটি ঘড়ির মিনিট ও ঘণ্টার কাঁটা দুটি ১২ ঘণ্টায় কতবার একটি কাঁটা আরেকটির ঠিক ওপরে, অর্থাৎ সম–অবস্থানে আসে?’
বইয়ের কোন পাতাটি নষ্ট হয়েছিল
বইয়ের কোন পাতাটি নষ্ট হয়েছিল
কতজন শিশু চকলেট পেয়েছে
কতজন শিশু চকলেট পেয়েছে
কোন দুটি সংখ্যার গুণফলের চেয়ে যোগফলের মান বেশি?
কোন দুটি সংখ্যার গুণফলের চেয়ে যোগফলের মান বেশি?
অঙ্ক দুটি কী
অঙ্ক দুটি কী
সংখ্যা পাঁচটির যোগফল কত?
মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের বেশ কিছু সহজ নিয়ম আছে। যেমন ৫৪৩ সংখ্যাটি মৌলিক কি না, বের করতে হবে। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এর অঙ্কগুলোর যোগফল বের করে দেখা সেটা ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ... দ্বারা বিভাজ্য কি না। বিভাজ্যতার নিয়মগুলো মনে রাখলে আমরা সহজেই কাজটি করতে পারি। এ ক্ষেত্রে অঙ্কগুলোর যোগফল = (৫ + ৪ + ৩) = ১২। এই যোগফল যেহেতু ৩ দিয়ে বিভাজ্য, তাই চট করে বলে দেওয়া যায় যে পুরো সংখ্যাটি ৩ দিয়ে বিভাজ্য, তাই মৌলিক সংখ্যা নয়। একই কারণে ৪৫৩, ৪৩৫, ৩৫৪, ৩৪৫ সংখ্যাগুলোও মৌলিক সংখ্যা নয়।
আরেকটি সমস্যা দেখুন। ১৭ দিয়ে বিভাজ্য তিন অঙ্কের সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করতে হবে। কীভাবে বের করব। প্রথমে আমরা ১৭ দিয়ে বিভাজ্য তিন অঙ্কের মোট সংখ্যা বের করি। তিন অঙ্কের মোট সংখ্যা = (৯৯৯ – ১০০ + ১) = ৯০০টি। যেহেতু (৯০০/১৭) = ৫২.৯৪, তাই ৯০০টি সংখ্যার মধ্যে ১৭ দিয়ে বিভাজ্য সংখ্যা আছে মোট ৫২টি। এগুলোর মধ্যে ১৭ দিয়ে বিভাজ্য প্রথম ও শেষ সংখ্যা দুটি বের করি। যেহেতু (১০০/১৭) = ৫.৮৮, তাই ১৭ দিয়ে বিভাজ্য তিন অঙ্কের প্রথম সংখ্যাটি (১৭x৬) = ১০২। অন্যদিকে যেহতু (৯৯৯/১৭) = ৫৮.৭৬, তাই শেষ সংখ্যাটি (১৭x৫৮) = ৯৮৬। এখন আমরা সহজেই সমান্তর ধারাটির মোট ৫২টি পদের যোগফল বের করতে পারি। মোট যোগফল = (১০২ + ৯৮৬)x৫২/২ = ২৮২৮৮।
💕
NICE